আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : ফেব্রুয়ারি, ১৬, ২০২০, ৬:১২ অপরাহ্ণ




একজন রাজকুমার শীলের জীবন কাহিনী

গড় রেটিং: 4.3/5 (23 টি ভোট গৃহিত হয়েছে)

ঢাকা মেডিকেলের মেধাবী শিক্ষার্থী এখন ৫০ টাকার দিনমজুর!

রাজকুমার শীল। ছবি: সংগৃহীত

নাম তার রাজকুমার। চেহারাও রাজকুমারের মতই। ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। ঢাকা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় পেয়েছিলেন উচ্চতম স্থান। যথারীতি সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তিনি মেধাবীদের মেধাবী। কিন্তু স্বাস্থ্য বিড়ম্বনায় আজ মাত্র ৫০ টাকার দিনমজুর।

ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই অদম্য এই মেধাবীর জীবন কাহিনি।

দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন রাজকুমার শীল। তারপর মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। পাননি সঠিক চিকিৎসা। আজ তাই এই হাল। আজ তার নামের আগে ডাক্তার সহ-নাম যোগ হয়ে হতে পারত ডা. রাজকুমার শীল। তিনি হয়তো হতে পারতেন উপমহাদেশ খ্যাত চিকিৎসক। কিন্তু কাজ করছেন এক ভুষি কারখানায়। ঢামেক কে-৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন রাজকুমার।দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার অধিবাসী রাজকুমার শীল। ডিএমস ‘র চিকিৎসকরা তাকে সনাক্ত করেছেন।

ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী’র “আমাদের বন্ধু রাজকুমার শীল” নামে একটি সংগৃহীত লেখা থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়।

এতে বলা হয়েছে, “সময়: আনুমানিক দুপুর ১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। স্থান: বহিঃবিভাগ, বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর।

আমরা কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ডিউটি রুমে আছি। রোগী আসা প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মহিলা আসলেন। সাথে ৪৮ আর ৫২ বছর বয়সের দুজন ছেলে। কি সমস্যা জিজ্ঞেস করায় হাতের কাগজগুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করবেন ছেলের জন্য। অনেক কাগজের সাথে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দু’টি ছাড়পত্র পেলাম। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না, কোন ছেলে রোগী। পরে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে বললেন, তার দুই ছেলের জন্যই দরখাস্ত করবেন। দুইজনেরই একই অসুখ। দুইজনের মধ্যে একজনের ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সই দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। নাম লেখা রাজকুমার শীল। হাতের লেখাটা কেন যেন তার চেহারার সাথে মিলছে না। সুন্দর লেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। বললেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম। নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না। একে একে উনার সব কিছু বললেন। কে-৪০ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ঢাকা কলেজ শেষে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজি তে ফেল করে পরে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তারপর মানসিক অসুস্থতার (সিজোফ্রেনিয়া) জন্য বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন ১৪/১৫ বছর। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতেন।১ বছরের মত পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তিও পেয়েছিলেন, বললেন তার মা। কথা বার্তায় ও বেশ প্রকৃতস্থ মনে হল। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এখন আগের তুলনায় বেশ ভাল আছেন বলে জানালেন। মেডিকেলের পড়াশোনার ও কিছু বিষয় উনার এখনো মনে আছে।

বাবা পেশায় নাপিত হলেও চারজন ছেলের একজন বাদে কাউকেই সেই পেশায় আসতে দেননি।

অনুমতি নিয়ে এক সময়ের এই মেধাবী মানুষটির ছবি তুললাম। কে-৪০ ব্যাচের আমার শ্রদ্ধেয় একজন স্যারের ছবি দেখিয়ে বললাম চিনতে পারেন কিনা? মাথা দোলালেন। হয়ত কিছুটা চিনতে পেরেছেন। মনে করার চেষ্টা করলেন। উনার মা ও ছেলের ক্লাসমেট এর ছবি দেখলেন। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন।

কে জানে, সুস্থ থাকলে হয়ত এই রাজকুমার শীল হয়ে
উঠতেন স্বনামধন্য ডা.রাজকুমার শীল।

একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত এবং আর্থিকভাবে অসহায় মেধাবী ছাত্রের এমন পরিণতি মেনে নেওয়ার মত নয়।

এক রত্নগর্ভা মায়ের করুণ আকুতি

তার মা পার্বতী রাণী শীল জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল রাজকুমার। অসুস্থতার পর বর্তমানে সে কথাবার্তায় কিছুটা স্বাভাবিক। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে আগের তুলনায় অনেকটা ভালো।

রাজকুমারের আরেক ভাই একই রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।

রাজকুমার বর্তমানে একটি ভুষি কারখানায় কাজ করেন। দিন শেষে ৩০-৫০ টাকা মজুরি পান। আর এভাবেই চলছে এ মেধাবী মানুষটির জীবন।

টি কে ওয়েব.ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০